মুঘল সম্রাটদের ইতিহাস নিয়ে অন্যতম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং গুছানো বই। আব্রাহাম এরালি এখানে আবেগশূন্য, নির্মোহ, নিষ্পৃহভাবে একে একে বাবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত মুঘল সম্রাটদের জীবনের কাহিনী বলে গিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ইতিহাস লেখকদের জবানে একের পর এক অ্যানেকডোটস দিয়ে সম্রাটদের জীবনের কীর্তির পাশাপাশি, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তাদের চিন্তা ধারা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন।
এখানে আমরা দেখতে পারি বাবর কতোটা নেতৃত্বগুণসম্পন্ন উদার চিত্তের মানুষ ছিলেন, ধীরে ধীরে ঘাত, আঘাত খেয়ে কিভাবে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম কৌশলী সেনা অধিনায়কে পরিণত করেছিলেন (পানিপথের প্রথম যুদ্ধের সুন্দর বর্ননা আছে এখানে), আবার হুমায়ূন কতোটা কল্পনাবিলাসী, বাস্তবতা বির্বজিত, প্রখর নীতিবোধসম্পন্ন, ভাগ্যহীন বাদশাহ ছিলেন (সব দোষ ত্রুটি নিয়েও বাবর আর আওরঙ্গজেবকে বাদ দিলে নাসিরউদ্দীন মুহাম্মদ হুমায়ূনকে আমার কাছে মুঘল বাদশাহদের মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগে)।
এ বইয়ে শের শাহের সম্পর্কে পরিচ্ছেদটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মাত্র বিশ পাতার এ পরিচ্ছেদে শের শাহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছে, যা শের শাহকে নিয়ে লেখা অনেক বইয়ে পাওয়া যায় নাই। এরালির বিশ্লেষণে শের শাহ প্রশাসক, নেতা, সেনাধিনায়ক হিসাবে সমসাময়িকদের চেয়ে কতো বেশি অগ্রসর ছিলেন, সেটা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে শের শাহ যুদ্ধে জেতার জন্য যে কোন নীতি নৈতিকতার ধার রাখতেন না, ছলে বলে কৌশলে যে কোন মূল্যে জিততেন, এটাও প্রকাশ পেয়েছে। চৌসার যুদ্ধে হুমায়ূনের আলস্য, ভুল জায়গায় শিবির করে আনন্দ আমোদে নিমজ্জিত হওয়ার সুযোগে প্রবল বৃষ্টি আর বন্যার মধ্যে আক্রমণ করে হুমায়ূনকে পরাজিত করার ঘটনা - শের শাহের সুযোগসন্ধানী মানসিকতার পরিচয় দেয়।
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুই অধ্যায় আকবর আর আওরঙ্গজেবকে নিয়ে, আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর বিপরীত চরিত্রের দুই বাদশাহ কিভাবে বছরের পর বছর ধরে সাম্রাজ্য বিস্তার করার পাশাপাশি লৌহকঠিন হাতে শাসন করে গিয়েছিলেন, সে চিত্রটা কৌতুহলজনক। আকবরকে মহাপুরুষ বাদশাহ হিসাবে না দেখিয়ে এরালি আর ১০ জন নৃপতির মতোই আকবরের চরিত্র, শাসনপদ্ধতি আর নেতৃত্বগুণের দোষ ত্রুটি উল্লেখ করে আলোচনা করেছেন। জাহাঙ্গির, শাহজাহানও এখানে তাদের মর্যাদা অনুযায়ী জায়গা পেয়েছেন, তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব ঘটনা, ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে। আওরঙ্গজেবের পাশাপাশি উঠে এসেছে তার চিরশত্রু শিবাজীর জীবন।
একজন প্রকৃত ইতিহাসবিদের মতো এরালি এখানে আওরঙ্গ - শিবা কারোর প্রতিই সহানুভূতি দেখান নাই, আবার কারোর প্রতি বিন্দুমাত্র বিরূপতা বা বিদ্বেষ দেখান নাই। এরালি ঠান্ডা মাথায় আওরঙ্গজেবকে ব্যবচ্ছেদ করেছেন। আওরঙ্গ চারিত্রিকগতভাবেই নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, অসামাজিক স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু বুদ্ধি, কৌশল, বাক চাতূর্য, পরিকল্পনায় সমসাময়িক সবার চেয়ে এগিয়ে থাকায়, তিনি প্রায় অর্ধ শতাব্দী জুড়ে গোটা ভারত উপমহাদেশ শাসন করে গিয়েছিলেন। এরালি দেখিয়েছিলেন, আওরঙ্গের মূল নীতি ছিল "অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা" তিনি যখন যেটাতে সুবিধা পেয়েছেন, সেই ব্যবস্থাই নিয়েছেন। আওরঙ্গ এক দিকে কট্টর সুন্নি ছিলেন, আবার তার শাসনকালেই রাজ কর্মচারীর পদে সবচেয়ে বেশি হিন্দু কাজ করে গিয়েছিলেন।
ধর্ম, বর্ণ, আদর্শ নির্বিশেষে সবাইকে নিজের পক্ষে কাজ করানোর ব্যাপারে আওরঙ্গের কোন কুন্ঠা ছিলো না। মারাঠাদের সাথে সংঘাত দমনে আওরঙ্গ তীব্রভাবে রাজপুতদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন, এবং রাজপুতরাও তাদের জ্ঞাতিশত্রু মারাঠাদের দমনে কোন ঢিলামী দেয় নাই। যারা আওরঙ্গকে কাফের বিনাশী গাজী আর যারা হিন্দু বিদ্বেষী বাদশাহ হিসাবে চিত্রায়িত করতে চান, তাদের কাছে এসব তথ্য সরাসরি চপেটাঘাতের মতো লাগবে।
প্রায় সাড়ে পাচশো পাতার এ বইয়ের সব দিক কয়েকশো শব্দে লেখা, তুলে দেওয়া সম্ভব না। বইটার প্রায় প্রতিটা পরিচ্ছদই আলাদা রিভিউ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে মুঘল ইতিহাস পাঠ এবং চর্চা করার একটা ধারা দেখা যাচ্ছে, অনেকেই নির্ভরযোগ্য বই খুঁজতেছেন প্রকৃত ইতিহাস বুঝার জন্য। যারা সব ঘটনা জেনে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চান, নিজে বিচার করে বুঝতে চান ইতিহাসে কোন ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছিল, তাদের জন্য আব্রাহাম এরালির লাস্ট স্প্রিং খুবই কার্যকারী বই।
একজন দক্ষ ও পেশাদার ইতিহাসবিদের মাধ্যমে মুঘল জগতকে চিনে, মুঘল শাসনের সময়কালকে নিজের মনের মধ্যে অনুভব করতে চাইলে, নাটুকে আবেগী বয়ান বাদ দিয়ে তথ্য প্রমাণসহ নির্ভরযোগ্য তথ্যের মাধ্যমে মুঘল যুগ সম্পর্কে বাস্তবতার যথাসম্ভব কাছাকাছি চিত্র পেতে চাইলে, আব্রাহাম এরালি লাস্ট স্প্রিং এর প্রথম পর্ব আপনার জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Very informative and readable history. It Dissipated lots of perception regarding Aurangzeb' rule. It will be better if this book includes the later 150 years of the Mughal period tell Bahadur Shah.
This is not just for the history buffs. As rightly said by ‘William Dalrymple’, these books give us an extensive and interesting introduction to the first six Mughal Emperors of India. Starting from the fearless Babur to determined Aurangzeb, the story of the last golden age of mother India unfolds gradually. My personal favorite – Akbar. Akbar, the great, stands true to his title. India flourishes to reach its peak during his reign. Oh the art and architecture marvels! The cultural advancement! It was plain abundance in everything! And after that comes the descend. Naturally, what goes up has to come down, isn’t it? If our history teachers at school could have taken us through our country’s history with a narrative like Eraly’s, every student would have become a fan of Indian history.
A must read for everyone to enjoy and relive our history during the Mughal period.